বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ব্যাপক ঘুষ-দুর্নীতি ও কয়েকজন শিক্ষক নেতার চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করায় এক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। লাঞ্ছিত’র শিকার ওই শিক্ষকের নাম মো. সাফায়েত হোসেন। তিনি উপজেলার শ্যামপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত।
এ ঘটনায় ওই শিক্ষক শনিবার (২৪ মে) পুনরায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। যার অনুলিপি ডাকযোগে খুলনা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক বরাবরে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
অভিযোগপত্রে জানা যায়, মো. সাফায়েত হোসেন এলাকায় প্রতিবাদী শিক্ষক হিসেবে সুপরিচিত। তিনি শ্যামপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। গত ২৯ এপ্রিল তিনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে চিতলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ শিক্ষা অফিসের ব্যাপক ঘুষ-দুর্নীতি ও কয়েকজন শিক্ষক নেতার চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে একটি লিখিত আবেদন করেন। এতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস, সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মানস কুমার তালুকদার, অফিসের ক্লার্ক ও কয়েকজন শিক্ষক নেতা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। এর ফলশ্রুতিতে গত ১৮ মে তিনি অফিসে ল্যাপটপ আনতে গেলে সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মানস কুমার তালুকদার তাকে বলেন, ‘আপনি সাব ক্লাস্টারের সম্মানী পাবেন না। আমি আপনার স্বাক্ষর কেটে দিয়েছি।’ স্বাক্ষর কাটার কারণ জানতে চাইলে তিনি শিক্ষক সাফায়েতকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন। শিক্ষককে লাঞ্ছিতের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানস কুমার তালুকদার ডিপামেন্টের অনুমতি ছাড়াই থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। ঘটনার পর থেকে শিক্ষক সাফায়েত এই চক্রের ষড়যন্ত্রে শিকার হয়ে মানসিক ও সামাজিক ভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে শ্যামপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাফায়েত হোসেন বলেন, চিতলমারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। টাকা ছাড়া এখানে কোন ফাইল নড়ে না। এর সাথে অফিসের কর্মকর্তা থেকে কর্মচারী পর্যন্ত জড়িত। তাই প্রতিকার চেয়ে জেলা স্যারের কাছে আবেদন করেছিলাম। বিনিময়ে আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এখন তারা তাদের পথ পরিস্কার করার জন্য আমাকে এ উপজেলা থেকে বদলী করার ষড়যন্ত্র করছে।
লাঞ্ছিতর করার কথা অস্বীকার করে চিতলমারী উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানস কুমার তালুকদার বলেন, আমি তার বিরুদ্ধে শোকজ করায় সে আমাদের অফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। আমার নিরাপত্তার স্বার্থে থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে আমার অভিযোগের অনুলিপি দিয়ে রেখেছি।
ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে চিতলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস বলেন, আমাদের অফিসে কোন ঘুষ-দুর্নীতি চলে না। তাকে কেউ লাঞ্ছিত করে নাই। সে মানস বাবুকে লাঞ্ছিত করেছে তার ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন আকতার বলেন, শিক্ষক মো. সাফায়েত হোসেনের দুইবার করা লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি। তাঁর করা অভিযোগের তদন্ত চলছে। সত্যতা পেলে দাপ্তরিক বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এএজে